প্যারাশুট এক ধরনের বস্তু যা পড়ন্ত বা ছুটন্ত অপর কোন ব্যক্তি বা বস্তুর
গতি কমাতে সাহায্য করে। এটি সাধারনত উচ্চতা থেকে নিরাপদে ভূমিতে অবতরনের
জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ভূমির সমতলে দ্রুতগতি সম্পন্ন কোন যানবাহনের গতি
কমানোর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। প্যারাশুট শব্দটি
একটি ফরাসি শব্দ থেকে থেকে এসেছে যার মধ্যে ‘প্যারা’ একটি ল্যাটিন উপসর্গ
যার অর্থ ‘বিপরীতে’ বা ‘বিরুদ্ধে’। আর ‘শুট’ শব্দাংশটি একটি ফরাসি শব্দ যার
অর্থ ‘পড়া’। পুরো অর্থ দাড়াচ্ছে ‘পড়ার বিরুদ্ধে’। উঁচু থেকে কোন কিছুর
দ্রুত পতন রোধ করাই মূলত এর কাজ।
আবিস্কারের ইতিহাসঃ
প্রাথমিক অবস্থায় সিল্কের কাপড় দিয়ে তৈরি হতো প্যারাশুট। পরবর্তীতে এ
কাজে টেকসই নাইলন এর কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়। এ ধরনের কাপড়গুলো পাতলা এবং
হালকা হয়ে থাকে। এই কাপড়ের সাথে আটকানো থাকে সাস্পেনসন লাইন। সাস্পেনসন
লাইন এসে যুক্ত হয় হার্নেস এর সাথে। মূল ভারকে বহন করে হার্নেস।
প্যারাশুটের মাধ্যমে যখন কোন ব্যক্তি বা বস্তু উপর থেকে নামতে থাকে, তখন
ক্যানোপি বা প্যারশুটের গোল অথবা বর্গাকৃতির কাপড়টিতে বাতাস লেগে উর্ধমূখী
চাপের সৃস্টি হয়। ফলে সেই বস্তু বা ব্যক্তির পতনের গতি কমে যায় এবং নিরাপদে
ভূমিতে অবতরন করতে পারে। আধূনিক প্যারাশুট গুলোতে কন্ট্রোল লাইন থাকে যা
দিয়ে এর গতি এবং দিক নিয়ন্ত্রন করা যায়। নিচের চিত্রটি দেখলে বিষয়টি আরও
পরিস্কার হবে।
প্যারাশুট নিয়ে কিছু রেকর্ড ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাঃ
প্যারাশুট দিয়ে সবচেয়ে উঁচু থেকে লাফ দিয়ে রেকর্ড সৃস্টি করেন Joseph Kittinger ১৯৬০ সালে। প্রায় ৩১ হাজার মিটার উপর থেকে তিনি লাফ দেন এবং এ উচ্চতায় উঠার জন্য ব্যবহার করেন একটি গরম বাতাস ভর্তি বেলুন।
এপোলো ১৫ তার চাঁদে অভিযান শেষে এর ক্যাপসুলটিকে পৃথিবীতে সমুদ্রের পানিতে অবতরনের সময় ব্যবহার করা হয় তিনটি প্যারাশুট। দূর্ভাগ্যবশত এর একটি প্যারাশুট পুরোপুরি খোলে না এবং বিকল হয়ে যায়।
তবে ক্যাপসুলটি নিরাপদেই অবতরন করতে পেরেছিল। কারন সেটি ডিজাইন করা
হয়েছিল দুটি প্যারশুট দিয়ে অবতরনের উপযোগী করে। আর অপর প্যারাশুটটি রাখা
হয়েছিল যদি কোন কারনে একটি প্যারাশুট বিকল হয়ে যায়, তখন যাতে সেই ব্যাকআপ
প্যারাশুটটি ব্যাবহার করা যায়। আর ঘটেছিলও ঠিক তাই …

আবিস্কারের ইতিহাসঃ
প্রথম প্যারাশুটের আবিস্কার এবং ব্যবহার
সম্পর্কে বেশ কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে। তবে খুবই নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র
মতে এর আবিস্কারের ইতিহাস এরকম। নয় শ শতাব্দীতে প্রথম প্যারাশুটের একটি
প্রাথমিক পর্যায় ডেভেলপ করেন Al-Andalus এবং Abbas Ibn Firnas নামক দুই
ব্যাক্তি। এরপর চৌদ্দ শ শতাব্দীতে অনেকটা পিরামিড আকৃতির একটি প্যারাশুটের
ছবি
আঁকেন
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। ক্যানোপিকে ধারন করার জন্য এই প্যারাশুটে কাঠের
চারকোনা ফ্রেম ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ভিঞ্চির এই প্যারাশুটি আদৌ
ব্যবহার অথবা পরীক্ষা করা হয়েছে, এমন কোন প্রমান মেলেনি। তবে এরও অনেক আগে
বারো শ শতাব্দীতে চীনে শিশুদের আনন্দ দেয়ার জন্য ছাতা আকৃতির এক ধরনের
প্যারাশুট ব্যবহৃত হতো। এটি দিয়ে কিছুটা উঁচু একটি স্থান থেকে লাফ দিয়ে
নিরাপদে ভাসতে ভাসতে ভূমিতে নেমে আসা যেত। মূলত প্যারাশুটের উন্নয়ন এবং
প্যারাশুট নিয়ে গবেষনা শুরু হয় আঠার শ শতাব্দীতে। Louis-Sébastien
Lenormand প্রথম প্যারাশুটে চড়ে একটি গাছ থেকে লাফ দেন। এর দুই বছর পর J.
P. Blanchard সিল্ক দিয়ে প্যারাশুট তৈরি করেন এবং এটিতে নমনীয় কাঠামো
ব্যবহার করা হয়। এই সময়ে গরম বাতাস ভর্তি বেলুন থেকে প্যারাশুটের মাধ্যমে
লাফ দিয়েছেন কেউ কেউ। ১৯১১ সালে Grant Morton প্রথম উড়োজাহাজ থেকে
প্যারাশুট দিয়ে লাফ দেন।

গঠন ও কার্যপ্রনালীঃ
আকৃতিগত দিক দিয়ে প্যারাশুট মূলত দুই ধরনের হয়। একটা গোলাকৃতির এবং অপরটি অনেকটা বর্গ বা আয়াতাকৃতির। এগুলোর উপর ভিত্তি করে আরও কয়েক ধরনের প্যারাশুট তৈরি হয়েছে। যেমনঃ রিবন এন্ড রিং টাইপ, র্যাম এয়ার টাইপ ইত্যাদি।

প্যারাশুট দিয়ে সবচেয়ে উঁচু থেকে লাফ দিয়ে রেকর্ড সৃস্টি করেন Joseph Kittinger ১৯৬০ সালে। প্রায় ৩১ হাজার মিটার উপর থেকে তিনি লাফ দেন এবং এ উচ্চতায় উঠার জন্য ব্যবহার করেন একটি গরম বাতাস ভর্তি বেলুন।
এপোলো ১৫ তার চাঁদে অভিযান শেষে এর ক্যাপসুলটিকে পৃথিবীতে সমুদ্রের পানিতে অবতরনের সময় ব্যবহার করা হয় তিনটি প্যারাশুট। দূর্ভাগ্যবশত এর একটি প্যারাশুট পুরোপুরি খোলে না এবং বিকল হয়ে যায়।

No comments:
Post a Comment